ভুয়া খবর, আজেবাজে ছবি, ভিডিও, পোস্ট- নানা জঞ্জালে ভরে যাচ্ছে ফেসবুকের ওয়াল। একেবারে ত্যক্ত বিরক্ত! কিন্তু তারপরও ফেসবুক ছাড়বেন ছাড়বেন করে আর ছাড়াই হচ্ছে না। এদিকে রাত জেগে নিয়মিত ফেসবুকে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেয়ার কারণে অফিস যেতে প্রায়ই দেরি হচ্ছে। পরিবারের লোকজনের সঙ্গেও সময় দেয়া হয়ে উঠছে না। কিন্তু কীভাবে এ আসক্তি থেকে মুক্তি মিলবে, তা নিয়ে আছেন দ্বিধায়।
গবেষকরা বলছেন, ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মাত্র চার সপ্তাহের জন্য নিষ্ক্রিয় (ডিঅ্যাক্টিভেট) কিংবা বন্ধ রাখলে মানুষের আচরণ এবং মানসিক অবস্থার আমূল পরিবর্তন হয়। শুধু তাই নয়; টানা কয়েক দিনের জন্য ফেসবুক ব্যবহার বন্ধ রাখলে ফেসবুক আসক্তি কমে যায়। ফেসবুক ব্যবহার বন্ধের কারণে মানুষ সমসাময়িক অনেক বিষয়ে জানতে পারেন না ঠিকই, কিন্তু তারা সুখী থাকেন।
ফেসবুক ব্যবহারের উপকারিতা খুবই স্পষ্ট। একই প্লাটফর্ম ব্যবহার করে বন্ধু-পরিচিতদের সঙ্গে সংযুক্ত ও সুসম্পর্ক বজায় রাখা যায়, সমসাময়িক বিভিন্ন সংবাদ সম্পর্কে জানা এবং বিনোদনের কনটেন্ট পাওয়া যায়। ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য ক্রেতা এবং দর্শক খুঁজে পাওয়া সহজ হয়।
কিন্তু গবেষক এবং ভোক্তা পরামর্শকরা সোস্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মের নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছেন। ফেসবুক ব্যবহার সমাজ এবং ব্যক্তিস্বাস্থ্য ও সুস্থ্য থাকার ক্ষেত্রে আদৌ কী কোনো ভূমিকা রাখছে, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
বিশ্বব্যাপী প্রতিমাসে ফেসবুকে সক্রিয় মানুষের সংখ্যা ২৩৭ কোটি। সোস্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মটির মাধ্যমে তারা পরিচিত কিংবা অপরিচিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন, বিভিন্ন বিষয়ে পোস্ট দিচ্ছেন। এছাড়াও ফেসবুক ঘিরে গড়ে উঠেছে এফ-কমার্স। অর্থাৎ এখন ব্যবসায় উদ্দেশ্যে ব্যাপক পরিসরে ফেসবুক প্লাটফর্ম ব্যবহার হচ্ছে। বিপুল সংখ্যক মানুষের নেশাগ্রস্তের মতো ব্যবহার ফেসবুকের প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে। ফেসবুক গত বছরজুড়ে ডজনের বেশি তথ্য কেলেঙ্কারির ঘটনার মুখোমুখি হয়েছে। এসব ঘটনার পরও ফেসবুকের ব্যবসায় বিন্দুমাত্র নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি। বরং ফেসবুক ব্যবহারকারী ধারাবাহিকভাবে বেড়েই চলছে। একই সঙ্গে প্লাটফর্মটির মুনাফা ও রাজস্ব দুটোই বাড়ছে।
গত বছর নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক যৌথ গবেষণায় উঠে আসে, সাময়িক সময়ের জন্য ফেসবুক ব্যবহার বন্ধ করলে মানুষ অফলাইনে আরো বেশি সময় কাটানো, টিভি দেখা, পরিবার এবং বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় যোগ দেয়ার সুযোগ পায়। ফেসবুক ব্যবহার না করলে অনেক বিষয় সম্পর্কে মানুষ অজ্ঞাত থাকেন। কিন্তু তা ব্যক্তিজীবনে খুব বেশি গুরুত্ব বহন করে না। কারণ ফেসবুক ছাড়াও আরো বিভিন্ন মাধ্যম থেকে মানুষ জানার আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারে। তবে মানুষের স্ব-নির্ধারিত সুখ এবং আত্মতুষ্টির মতো বিষয় বেড়ে যায়।
২ হাজার ৮৪৪ জন ফেসবুক ব্যবহারকারীর ওপর জরিপ চালিয়ে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। জরিপে অংশ নেয়াদের ভাষ্যে, বিনোদন, জনকল্যাণমূলক কাজে সংগঠিত ও সক্রিয় হওয়া, সামাজিক বন্ধন সৃষ্টি, অসহায়ত্ব ও আত্মপরিচয় সংকটে থাকা মানুষদের সহায়তার পাশাপাশি নানা দিক থেকে তাদের জীবন-মান উন্নত করেছে ফেসবুক। কিন্তু আসক্ত হয়ে ফেসবুক ব্যবহারের নেতিবাচক দিক আরো জোরালো।
গবেষকদের দাবি, ব্যবহারকারীদের মানসিক অবস্থার উন্নতিতে ফেসবুকের ভূমিকা খুবই কম। মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে উদ্বেগ বাড়ছে। বিশেষ করে, তরুণ প্রজন্ম ফেসবুকে আসক্ত হয়ে পড়ছে, যা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
অবশ্য ফেসবুক দাবি করে আসছে, তাদের প্লাটফর্মের অর্থপূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করতে একদল কর্মী নিরলসভাবে কাজ করছে। ব্যবহারকারীরা যাতে ফেসবুকে আসক্ত হয়ে না পড়ে সে জন্য তারা টুল সরবরাহের বিষয়ে ভাবছে। এছাড়া ব্যবহারকারীদের তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং প্লাটফর্মে ভুয়া সংবাদের দৌড়াত্ম্য ঠেকাতে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে ফেসবুক।
আপনার মতামত লিখুন :