ইডিওপ্যাথিক পালমোনারি ফাইব্রোসিস (আইপিএফ) একটি দীর্ঘস্থায়ী, প্রগতিশীল ফুসফুসের রোগ। এটা হলে ফুসফুসের নরম অংশগুলো নষ্ট হয়ে যায় এবং সেখানে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। এতে ফুসফুসের কলাগুলো (টিস্যু) মোটা ও শক্ত হয়ে যায়, ফলে ফুসফুসে বাতাসের থলিগুলো ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। তখনই শুরু হয় শ্বাস নেওয়ার সমস্যা।
ফাইব্রোসিস শুধু ফুসফুসের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা নষ্ট করে তা নয়, ফুসফুসের স্থায়ী ক্ষতিও করে। করোনার পরে অনেকে এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। শিশু থেকে প্রাপ্তবয়স্ক, ধূমপায়ী এমন কী আগে ধূমপানের অভ্যাস থাকলে তারাও পালমোনারি ফাইব্রোসিসে আক্রান্ত হতে পারেন।
৭৩ বছর বয়সী ওস্তাদ জাকির হোসেন দীর্ঘদিন ধরেই ফুসফুসের এ বিরল রোগে ভুগছিলেন। চিকিৎসকরা বলছেন, পঞ্চাশ পেরোনো ধূমপায়ী পুরুষদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি।
রোববার (১৬ সোমবার) সান ফ্রান্সিসকোর হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন প্রখ্যাত তবলাবাদক ওস্তাদ জাকির হোসেন। দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুসের বিরল এ রোগে ভুগছিলেন তিনি। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলা হয় ‘ইডিওপ্যাথিক পালমোনারি ফাইব্রোসিস’। এ সংক্রান্ত জটিলতা নিয়েই বিগত দু’সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। অবস্থার অবনতি হলে তাকে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে স্থানান্তরিত করা হয়। ভেন্টিলেটরে রাখা হলেও শেষরক্ষা হয়নি তার।
ইডিওপ্যাথিক পালমোনারি ফাইব্রোসিস কী?
সাধারণত শ্বাস নেওয়ার সময়ে ফুসফুস ফুলে ওঠে, আবার শ্বাস ছাড়ার সময়ে তা চুপসে যায়। ‘ইডিওপ্যাথিক পালমোনারি ফাইব্রোসিস’ বা ‘আইপিএফ’-এ আক্রান্ত হলে শ্বাস নেওয়ার সময়ে ফুসফুস ঠিকমতো ফুলতে পারে না। ফলে রক্তে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয়। শ্বাস নিতেও কষ্ট হয়। ফুসফুস সংক্রান্ত রোগের চিকিৎসক আরাত্রিকা দাস বলেন, ‘ফুসফুস তো স্পঞ্জের মতো নরম একটি প্রত্যঙ্গ। আইপিএফ হলে ফুসফুস ক্রমশ তার নমনীয়তা হারাতে শুরু করে। সহজ কথায় বললে যা দাঁড়ায় তা হলো ফুসফুস শুকিয়ে যায়। শুধু তাই নয়, শ্বাসযন্ত্রের ভেতর যে ছোট ছোট বায়ুথলি বা অ্যালভিয়োলাই রয়েছে, সেগুলোও ক্রমশ শক্ত এবং পুরু হতে শুরু করে। ফলে পালমোনারি হাইপারটেনশন বা শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। সেখান থেকে হৃদ্যন্ত্র বিকল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।’
কেন হয় এই বিরল রোগ?
চিকিৎসক আরাত্রিকা বলেন, ‘আইপিএফ কেন হয়, তা এখনও পর্যন্ত কেউই নির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি। তাই রোগটির নামের সঙ্গে ‘ইডিওপ্যাথিক’ (অজ্ঞাত কারণ) শব্দটি জুড়ে দেওয়া হয়েছে।’ তবে এই রোগ সংক্রান্ত বিভিন্ন গবেষণায় কারণ হিসেবে পরিবেশ দূষণ, ধূমপান এবং জিনঘটিত ঝুঁকির কথা বলা হয়েছে।
আইপিএফ-এর লক্ষণগুলো কী কী?
ফুসফুসের সমস্যায় শ্বাসকষ্ট স্বাভাবিক একটি লক্ষণ। তবে আইপিএফ হলে সামান্য হাঁটাচলা, হালকা শরীরচর্চাতেও শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। এ ছাড়া বছরভর শুকনো কাশি, ক্লান্তির মতো একেবারে সাধারণ কিছু উপসর্গ দেখা দিতে পারে। সাধারণ ঠান্ডা লাগা বা ইনফ্লুয়েঞ্জাজনিত জ্বর-সর্দি হলে আইপিএফ মাত্রা বেশি হতে পারে।
সঠিক চিকিৎসায় কি এই রোগ সারে?
এই রোগের তেমন কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। সমস্যা থেকে চিরতরে মুক্তি পেতে হলে ফুসফুস প্রতিস্থাপন করাতে হয়। যেটা খুব ব্যয়বহুল। এছাড়া বয়স্কদের ক্ষেত্রে এই অস্ত্রোপচার বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। আরাত্রিকা বলেন, ‘আইপিএফ কিন্তু এক দিনে হয় না। এই রোগে আক্রান্ত হলে ধীরে ধীরে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়। এমন ওষুধ বাজারে রয়েছে, যা ফুসফুসের কার্যক্ষমতা নষ্ট করার এই গতি শ্লথ করতে পারে। তাতে কষ্ট খানিকটা লাঘব হয়। বয়স্কদের ক্ষেত্রে বাইরে থেকে অক্সিজেন দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। কমবয়সী হলে আমরা ‘লাং এক্সপ্যানশন এক্সারসাইজ’ করার পরামর্শ দিয়ে থাকি।
‘আইপিএফ’ এবং ‘সিওপিডি’ কি এক?
এই দুটিই ফুসফুসের রোগ। তবে রোগ দুটি সম্পূর্ণ আলাদা। তা সত্ত্বেও দুটির মধ্যে অনেকগুলো যোগসূত্র রয়েছে। যেমন, আইপিএফ এবং সিওপিডি কিন্তু একইসঙ্গে হতে পারে। বেশির ভাগ ধূমপায়ীর মধ্যেই এই দুটি রোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আবার এই দুটি রোগ পুরুষদের মধ্যেই বেশি দেখা যায়। যারা আইপিএফ এবং সিওপিডি এই দুটি রোগে একসঙ্গে আক্রান্ত হন, তাদের জন্য রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা পদ্ধতি আরও জটিল হয়ে যায়।
আপনার মতামত লিখুন :