শীত মানেই নতুন গুড়ের সময়। আর এই গুড় দিয়েই তৈরি হয় হরেক রকমের মিষ্টি আর পিঠাপুলি। যার স্বাদের সঙ্গে তুলনা চলে না কোনও কিছুরই। গুড় যেমন খাবারের স্বাদ বাড়ায় তেমনি পুষ্টিগুণেও ভরপুর। গুড়ে প্রচুর পরিমাণে উপকারী ভিটামিন ও খনিজ থাকায় এটি শরীরের নানা অঙ্গপ্রত্যঙ্গের জন্যতো বটেই, ত্বকের জন্যও বিশেষভাবে উপকারী। গুড় ব্রণ, দাগছোপ সরিয়ে দেয়, ত্বকে সহজে বয়সের ছাপও পড়তে দেয় না। সুগারের ভয়ে অনেকেই ইচ্ছা হলেও গুড় খেতে পারেন না। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন শীতকালে সবারই গুড় খাওয়া উচিত।
কিন্তু কেন শীতকালে গুড় খাওয়া উচিত জানেন?
গুড়কে সুপার ফুড বলে মনে করা হয়। এই গুড়ে আছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, এবং প্রয়োজনীয় খনিজ সেম্ন আয়রন, জিঙ্ক, সেলেনিয়াম। এই সব উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
পাচক এনজাইমগুলোকে উদ্দীপিত করার ক্ষমতার জন্য পরিচিত গুড়, খাবার সহজে হজম করতে সাহায্য করে। বিশেষ করে শীতকালে অনেক আজেবাজে খাবার খাওয়া হয়, সেই সব ভারী খাবার হজম করতে গুড়ের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা বিরুদ্ধে লড়াই করে অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতেও বেশ গুরত্বপূর্ণ।
শরীর থেকে দূষিত পদার্থ ছাঁকতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে লিভার। নিয়মিত গুড় খেলে লিভারে দূষিত পদার্থ জমার পরিমাণ কমে। টক্সিন থেকে ক্ষতির আশঙ্কাও কমে।
শীতকালে হাঁপানির সমস্যা বেশি হয়। যাদের এ সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত গুড় খেতে পারেন। তাহলে হাঁপানিতে স্বস্তি পাবেন।
শ্বাসকষ্ট হলে সমপরিমাণ গুড় এবং সরিষার তেল মিশিয়ে খেলে শ্বাসকষ্টে আরাম মেলে।
সর্দি-কাশি দূর করতে উপকারী গুড়। গুড়ের সঙ্গে বিট লবণ এবং আদা মিশিয়ে খেলে সর্দি-কাশিতে আরাম মেলে। অত্যাধিক কাশিতে কষ্ট পেলে গুড় খান। সঙ্গে আদা মিশিয়ে নেবেন। আদা কুচি আর গুড় একসঙ্গে খেলে কাশির হাত থেকে মুক্তি মেলে।
শরীর দুর্বল থাকলে দুধের সঙ্গে গুড় মিশিয়ে খান। এতে শরীর চাঙ্গা হয়ে উঠবে। গুড় এবং আদা একসঙ্গে গরম করে খেলে গলার জ্বলুনি কমে যায়। নিয়মিত গুড় খেলে ফুসফুসের মিউকাস পরিষ্কার হয়। এই কারণেই শ্বাস-প্রশ্বাস এবং হজমের সমস্যা দূর হয়। প্রতিদিন গুড় খেলে শরীর ডিটক্স হয়।
গুড়ের অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল গুণের জন্যই শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যেতে পারে। কয়লাখনি, সিমেন্ট, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের মতো দূষণ অধ্যুষিত এলাকায় যারা থাকেন, তাদেরও নিয়মিত গুড় খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
গুড়ে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টের পরিমাণ বেশি। এই উপাদানটি অক্সিডেটিভ স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। দূষণের কারণে শরীর-স্বাস্থ্যের যে ধরনের ক্ষতি হয়, তা থেকে রক্ষা করতে পারে গুড়।
গুড় শরীরকে গরম রাখতেও সাহায্য করে। রক্ত সঞ্চালন উন্নত করতে সাহায্য করে এবং শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রার ভারসাম্য বজায় রেখে শরীরকে খুব ঠান্ডা হওয়া থেকে রক্ষা করে।
হালকা গরম পানিতে গুড় ভিজিয়ে সেই পানি পান করলে অনেক অসুখ প্রতিরোধ করা যায়। এছাড়াও সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্যও দারুণ উপকারী গুড়ের পানি।
গুড়ের পানিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, বি, সি, গ্লুকোজ, সুক্রোজ, ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস।
নিয়মিত গুড়ের পানি পান করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
নিয়মিত খালি পেটে হালকা গরম পানিতে গুড় ভিজিয়ে পান করলে তা পেটের জন্য দারুণ উপকারী। গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং পেটের নানা সমস্যা দূর করে। তলপেটে ব্যথার সমস্যাও দূর করে গুড়ের পানি।
আপনার মতামত লিখুন :