অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ এবং রোগীদের অতিমাত্রায় ওষুধের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে নিয়মিত শরীরচর্চার আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, নিয়মিত শরীরচর্চা আমাদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করে। এতে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপসহ নানা রোগের ঝুঁকি কমানো যায়।
রোববার (৬ এপ্রিল) ঢাকা মেডিকেল কলেজে বিশ্ব শারীরিক সক্রিয়তা দিবস উপলক্ষ্যে ফিজিক্যাল অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগ আয়োজিত র্যালিপূর্বক সমাবেশে বক্তারা এ কথা বলেন।
বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. এম এম জামানের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. কামরুল আলম। বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. ফারুক আহম্মদ।
র্যালিতে চিকিৎসকদের নিজেদের শরীর চর্চার প্রতি অবহেলা ও রোগীদের ওষুধের প্রতি অতিমাত্রায় নির্ভরশীলতার কথা আলোকপাত করেন বক্তারা। একইসঙ্গে অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় নিয়মিত শরীর চর্চার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়। তারা বলেন, নিয়মিত ব্যায়াম কেবল শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখে না, মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও এটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
চিকিৎসকরা সতর্ক করে বলেন, শারীরিক অপ্রতিরোধ্যতা আজকাল আধুনিক জীবনযাপনের একটি বড় সমস্যা। এর ফলে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগ বাড়ছে, বিশেষ করে যাদের জীবনযাপন অধিক আসক্ত ও অলস। এমনকি শরীরচর্চা না করার ফলে শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে, যা পরে হাঁটুর সমস্যা, মেদ জমা, হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীরা যদি নিয়মিত শরীরচর্চা না করেন, তবে তাদের শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে।
তারা আরও বলেন, শরীরচর্চা শুধু শারীরিক নয়, মানসিক সুস্থতার জন্যও অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। শিশুরা যখন শারীরিক খেলাধুলায় অংশ নেয়, তখন তারা মানসিকভাবেও দৃঢ় থাকে। অতিরিক্ত শরীরচর্চা ও নিয়মিত ব্যায়ামের ফলে হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি পায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী হয়। তাই অন্য রোগের চিকিৎসার পাশাপাশি শরীরচর্চার উপর গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন, যাতে ভবিষ্যতে সুস্থ, শক্তিশালী এবং কর্মক্ষম জীবন নিশ্চিত করা যায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানায়, শারীরিক সক্রিয়তা আমাদের শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং বিভিন্ন অসংক্রামক রোগ যেমন হৃদরোগ, স্ট্রোক, টাইপ-২ ডায়াবেটিস এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। সংস্থাটির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শারীরিক অপ্রতিরোধ্যতার কারণে প্রতি বছর প্রায় ২.৮ মিলিয়ন মানুষ মারা যায়। এটি দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতার কারণ হিসেবে পরিণত হয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শারীরিক সক্রিয়তার অভাবে মানসিক স্বাস্থ্যও ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা উদ্বেগ, অবসাদ এবং আত্মবিশ্বাসের অভাব সৃষ্টি করতে পারে।
এসময় আরও বক্তব্য রাখেন এন্ড্রোক্রাইনোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. ইন্দ্রজিৎ প্রসাদ, শিশু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. লুৎফন্নেসা, স্পাইন সার্জারির সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. শহিদুল ইসলাম আকন, মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহাবুল হুদা চৌধুরী এবং জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ডা. মুসা মোহাম্মদ হুজাইফাসহ আরও অনেকে।
আপনার মতামত লিখুন :