ঢাকা সোমবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৫, ১৪ বৈশাখ ১৪৩২

মাতৃত্ব নিরাপদ করাও রাষ্ট্রের অন্যতম বড় দায়িত্ব

ভোরের মালঞ্চ | অনলাইন ডেস্ক এপ্রিল ২০, ২০২৫, ০৩:৫৭ পিএম মাতৃত্ব নিরাপদ করাও রাষ্ট্রের অন্যতম বড় দায়িত্ব

মায়ের মাতৃত্ব নিরাপদ করাও রাষ্ট্রের অন্যতম বড় দায়িত্ব বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। তিনি বলেন, সুস্থ মাতৃত্ব নিশ্চিত করতে দক্ষ মিডওয়াইফ প্রয়োজন। সরকারি পর্যায়ে এখন মাতৃত্বকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তবে শুধু নীতিমালায় নয়, বাস্তবায়নেও আমাদের মনোযোগী হতে হবে।

 

রোববার (২০ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

 

নূরজাহান বেগম বলেন, আমি গ্রামীণ ব্যাংকের গ্রামীণ শিক্ষা নামক একটি কাজ করার সুবাদে একেবারে প্রান্তিক পর্যায়ের বাস্তবতা দেখেছি। অটিস্টিক শিশুর জন্ম বেড়ে গেছে। ১৩ বছরের শিশুকে মা কোলে করে নিয়ে আসছে, কিন্তু দেখে নাকি অন্য কিছু বোঝা যাচ্ছে না। কথা বলতে গিয়ে ওই শিশুর মায়ের কাছ থেকে শুনলাম যে, একদিন তার স্বামী ঝগড়ার সময় তার পেটে লাথি দিয়েছিল। এমন মানুষের সংখ্যাটা কিন্তু গ্রামীণ এলাকায় অনেক বেশি।

 

তিনি বলেন, বর্তমানে ৫০ শতাংশ শিশু হাসপাতালে জন্ম নিচ্ছে, বাকি ৫০ শতাংশ জন্ম নিচ্ছে অদক্ষ ধাত্রীদের মাধ্যমে। এর ফলে প্রায়ই প্রসবকালীন সময়ে শিশুদের অক্সিজেন ঘাটতি এবং মস্তিষ্কে আঘাত লাগে, এসব ক্ষেত্রে স্নায়বিক জটিলতা দেখা দিতে পারে, যা পরে অটিজমের মতো লক্ষণে প্রকাশ পেতে পারে। এসব কারণেই আমরা দেখছি, দেশে দিন দিন অটিস্টিক শিশুর সংখ্যা বাড়ছে। সচেতন না হলে ভবিষ্যতে এই হার আরও বাড়বে।

 

নারীর মর্যাদা ও বাল্যবিয়ে নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, আমরা নারীকে নারী হিসেবে, মাকে মা হিসেবে কতটুকু মর্যাদা দিচ্ছি? গ্রাম পর্যায়ে নারীরা আজও অবহেলিত। এখনো দেশে বালিকা বিবাহের হার উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। এই প্রবণতা বন্ধ না করলে সুস্থ শিশুর জন্ম সম্ভব নয়, বরং মাতৃমৃত্যুর হার বাড়বে।

 

চিকিৎসক ও নার্সদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমরা কী নিজেদের দিকে তাকাই? নিজেদের যদি নিজেরা প্রশ্ন করি, তাহলে ভুল কম হবে। ভুল চিকিৎসার অভিযোগ এখন সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই দায় থেকে আমাদের মুক্ত হতে হবে।

 

সচেতনতার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, কর্মহীনতা যত বাড়বে, সমাজে সমস্যা তত বাড়বে। সচেতনতা ছাড়া অটিস্টিক শিশুর জন্মহার রোধ করা যাবে না। পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্র—তিনটি স্তরকেই একসঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে।

 

তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন হাসপাতালে গিয়ে আমি দেখেছি, কিশোরী বয়সেই অনেক মেয়ে মা হচ্ছে। আমি তাদের মা হিসেবেই দেখি, ডাকি। কিন্তু শুধু আবেগ নয়, তাদের জন্য দরকার যথাযথ সেবা ও পুষ্টি। গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের যা দরকার—তা নিশ্চিত করতে না পারলে এসডিজির লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়।

 

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিষয়ক বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা) অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব ডা. মো. সারোয়ার বারী, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আশরাফি আহমেদ (এনডিসি), বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বাংলাদেশস্থ প্রতিনিধি ডা. আহমেদ জামশেদ মোহাম্মদসহ আরও অনেকে।

Side banner