১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই দেশের সব এলাকায় গড়ে ওঠে প্রতিরোধ। স্বাধীনতার জন্য অস্ত্র হাতে তুলে নেয় সর্বস্তরের মানুষ। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, রাজনৈতিক কর্মী, ছাত্র, শ্রমিক, কৃষক, পেশাজীবী নির্বিশেষে সব শ্রেণির মানুষ। দেশ মুক্তির সংগ্রামে দাঁড়ায় এক কাতারে।
পাক বাহিনীর আক্রমণ ও গণহত্যা মোকাবিলার জন্য গড়ে তোলা প্রতিরোধ প্রাথমিক পর্যায়ে স্বল্পস্থায়ী হয়। শত্রু সেনারা সংখ্যায় অনেক ও তারা ছিল অনেক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত, তাই মুক্তিযোদ্ধারা নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে চলে যায়। শিগগিরই দেশের বিভিন্ন অংশে বিচ্ছিন্ন মুক্তিসংগ্রামীদের একটি একক কমান্ডের অধীনে আনা হয়। ৪ এপ্রিল মুক্তিবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা চা-বাগানে পরিবৃত আধা-পাহাড়ি এলাকা তেলিয়াপাড়ায় দ্বিতীয় ইস্টবেঙ্গলের সদর দফতরে একত্র হন।
কর্নেল এম এ জি ওসমানী, লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবদুর রব, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সালাহ উদ্দিন মোহাম্মদ রেজা, মেজর কাজী নুরুজ্জামান, মেজর খালেদ মোশাররফ, মেজর নুরুল ইসলাম, মেজর শাফায়াত জামিল, মেজর মইনুল হোসেন চৌধুরী প্রমুখ সেনা কর্মকর্তা সেখানে উপস্থিত হন। এ সভায় চারজন সিনিয়র কমান্ডারকে অপারেশনের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
মেজর শফিউল্লাহকে সিলেট-ব্রাহ্মণবাড়িয়া অঞ্চলের অধিনায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কুমিল্লা-নোয়াখালী অঞ্চলের অধিনায়কের দায়িত্ব পান মেজর খালেদ মোশাররফ।
চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে মেজর জিয়াউর রহমান এবং কুষ্টিয়া-যশোর অঞ্চলের অধিনায়ক হন মেজর আবু ওসমান চৌধুরী। এ সভাতেই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বাহিনী সম্পর্কিত সাংগঠনিক ধারণা এবং কমান্ড কাঠামোর রূপরেখা প্রণীত হয়। কর্নেল এম এ জি ওসমানীকে মুক্তিবাহিনীর সর্বময় নেতৃত্ব দেওয়া হয়।
১০ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপরাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রবাসী সরকার তথা মুজিবনগর সরকার গঠিত হয়। পরদিনই তাজউদ্দীন আহমদ আরও তিনজন আঞ্চলিক অধিনায়কের নাম ঘোষণা করেন।
ক্যাপ্টেন নওয়াজিশ রংপুর অঞ্চলের, মেজর নাজমুল হক দিনাজপুর-রাজশাহী-পাবনা অঞ্চলের এবং মেজর এম এ জলিল বরিশাল-পটুয়াখালী অঞ্চলের অধিনায়কত্ব লাভ করেন। প্রতিটি অঞ্চলকে একেকটি সেক্টর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
১০ থেকে ১৭ জুলাই অনুষ্ঠিত সেক্টর কমান্ডারদের এক সম্মেলনে অপারেশন চালানোর সুবিধার্থে সমগ্র বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টর ও বিভিন্ন সাব-সেক্টরে বিভক্ত করা হয়।
আপনার মতামত লিখুন :