জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের হাজার বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি। তিনি আমাদের স্বাধীনতার প্রতীক। মুক্তির দিশারি। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে কখনও বিচ্ছিন্ন করে ভাবা যায় না। তিনিই ছিলেন আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রধান কাণ্ডারি।
তার ডাকেই আমরা যুদ্ধে গেছি। তার নামেই আমরা যুদ্ধ করেছি। স্বাধীন বাংলাদেশ অভ্যুদয়ের এক মহান নায়ক তিনি। বাঙালি জাতীয়তাবাদের শ্রেষ্ঠতম প্রবক্তা। বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাস ও সংগ্রাম তিনি নিজের চেতনায় লালন করেছেন।
তিনি সাম্রাজ্যবাদবিরোধী জাতীয় আন্দোলনের মূর্ত প্রতীক। তিনিই আমাদের শিরায়-উপশিরায় জাতীয়তাবাদের মূলমন্ত্রকে সঞ্চারিত করেছেন। অসাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবাদের এক আপসহীন সংগ্রামী নেতা তিনি। আমাদের বিস্মৃত জাতিসত্তাকে তিনি জাগ্রত করেছেন। আমাদের উদ্বুদ্ধ করেছেন মহান স্বাধীনতার সংগ্রামে, মুক্তির সংগ্রামে। বঙ্গবন্ধুর জীবন তাই স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ইতিহাসের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ প্রকৃত অর্থে অভিন্ন ও একাত্ম। বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ ও আমাদের স্বাধীনতা একই সূত্রে গাঁথা।
বঙ্গবন্ধু ছিলেন গণতন্ত্রের অতন্দ্র প্রহরী। তিনি ছিলেন জনগণের পক্ষে। স্বাধীন মতপ্রকাশের পক্ষে। শোষণ ও বঞ্চনার বিপক্ষে। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, শৃঙ্খল ও শোষণমুক্তির প্রবল আকাঙ্ক্ষাই ছিল তার সংগ্রামী জীবনের মূল কথা। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে চুয়ান্নর নির্বাচন, আটান্নর সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, ছেষট্টির ছয় দফা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচন ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব প্রদান তার গণতান্ত্রিক চেতনা, শৃঙ্খল ও শোষণমুক্তির উদগ্র বাসনাকেই আমাদের সামনে তুলে ধরে।
তিনি তার ব্যক্তিসত্তাকে বাঙালি জাতিসত্তায় রূপান্তরিত করেছিলেন। নিজের স্বার্থকে জাতীয় স্বার্থে বিলীন করে দিয়েছিলেন। তাই তিনি পরিণত হয়েছিলেন বাংলার সব বর্ণের, সব ধর্মের, সব মানুষের এক অবিসংবাদিত নেতায়। তিনি পুরো দেশকে জাগিয়েছিলেন। তার কথায় বাঙালি উঠত-বসত। তার অঙ্গুলিহেলনে সারা দেশ থমকে যেত। গাড়ির চাকা থেমে যেত। কোর্ট-কাছারি বন্ধ হয়ে যেত। তার কথায় বাঙালি কাঁদত-হাসত। তার জন্য মানুষ প্রার্থনা করত। তিনি ছিলেন বাঙালির এক মুকুটহীন সম্রাট। তাই তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধু। বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু তাই অভিন্ন। একে অপরের পরিপূরক।
আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অহঙ্কার আমি মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেছিলাম। আমি অত্যন্ত কাছে থেকে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ শুনেছিলাম। আমার পিতার সঙ্গে স্লোগান দিতে দিতে মিছিল করে গিয়ে উপস্থিত হয়েছিলাম রেসকোর্স ময়দানে।
তখন আমি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। সেদিন পিতার সঙ্গে রেসকোর্সে গিয়ে ভাষণ শুনতে বসেছিলাম মঞ্চের খুবই কাছে। বঙ্গবন্ধু একটু দেরি করে সভাস্থলে উপস্থিত হন। ধীর পদে এগিয়ে আসেন মাইকের সম্মুখে। তারপর শুরু করেন এক অবিস্মরণীয় ভাষণ। সামনের জনসমুদ্রের দিকে তাকিয়ে প্রথমে ভাবগম্ভীর স্বরে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আন্দোলনরত মানুষকে নির্মমভাবে হত্যার কথা তুলে ধরেন।
এরপর উল্লেখ করেন অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বঞ্চনার কথা। বঙ্গবন্ধু তার ধৈর্যশীল রাজনৈতিক ভূমিকার পাশাপাশি পাকিস্তানিদের হিংস্রতা ও নৃশংসতার বিবরণ দিয়ে সবশেষে হাত উঁচিয়ে অঙ্গুলি দোলানোর মাধ্যমে পরবর্তী দিকনির্দেশনা দিচ্ছিলেন এভাবে- ‘আমি পরিষ্কার অক্ষরে বলে দিবার চাই যে, আজ থেকে কোর্ট, কাছারি, আদালত, ফৌজদারি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে... আর যদি একটি গুলি চলে, আর যদি আমার লোককে হত্যা করা হয়, তোমাদের উপর আমার অনুরোধ রইল- প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো।তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে’। আমি অনুভব করছিলাম, বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠ থেকে অবিরাম আগুনের ফুলকি ঝড়ে পড়ছে।
মনে হচ্ছিল, তিনি আগুনের অক্ষরে লেখা এক দীর্ঘ কবিতা আবৃত্তি করে যাচ্ছেন। অবশেষে তিনি ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ রমনার রেসকোর্স ময়দানের লাখ লাখ কণ্ঠে তখন ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হতে থাকে- ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’। প্রকৃত অর্থে সেটিই ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা।
অতঃপর পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর আলোচনা ব্যর্থ হলে নেমে আসে ২৫ মার্চের কালরাত। অপারেশন সার্চলাইটের নামে মধ্যরাতে ঢাকায় ঘুমন্ত নিরীহ মানুষের ওপর শুরু হয় পাকিস্তানি সৈন্যদের বর্বরোচিত সশস্ত্র আক্রমণ। চলতে থাকে গণহত্যা। সেই রাতেই বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় পাকিস্তানি সৈন্যরা। তার আগে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
এক ওয়ারলেস বার্তায় তিনি বলেন, ‘এটাই হয়তো আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের মানুষকে আহ্বান জানাই, আপনারা যেখানেই থাকুন, আপনাদের সর্বস্ব দিয়ে দখলদার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত প্রতিরোধ চালিয়ে যান। বাংলাদেশের মাটি থেকে সর্বশেষ পাকিস্তানি সৈন্যকে উৎখাত করা এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের আগ পর্যন্ত আপনাদের যুদ্ধ অব্যাহত থাকুক।’
পরে ১০ এপ্রিল গণপরিষদ তার আনুষ্ঠানিক অনুমোদন দিয়েছিল। ১৭ এপ্রিল তার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছিল প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার। তাই বঙ্গবন্ধু আর বাংলার স্বাধীনতাকে বিচ্ছিন্ন করে দেখা যায় না। একটির সঙ্গে আরেকটি শব্দ একাকার হয়ে মিশে আছে।
২৫ মার্চ যখন আক্রমণ হল, আমি তখন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। ধারণা ছিল হালুয়াঘাট দিয়ে চলে যাব সীমান্তে। তারপর প্রতিরোধ ও যুদ্ধ। বাবা ফোন করে বললেন, আমরা আখাউড়ার ওপার থেকে লড়ব। বাড়ি চলে এসো। আমার বাবা ছিদ্দিকুর রহমান খান আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন একজন সদস্য। বাসুদেব ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। তার নেতৃত্বে তখন উজানিসার প্রতিরোধ দুর্গ গড়ে উঠেছে।
তাতে যোগ দিয়েছে ইপিয়ার, আনসার ও অসংখ্য স্থানীয় যুবক। জমাদার মোহাম্মদ হোসেনের নেতৃত্বে দেয়া হচ্ছে ট্রেনিং। আমি সেখানে যোগ দিলাম। প্রতিরোধ গড়ে তুললাম। কিন্তু কুমিল্লা থেকে ছুটে আসা খানসেনাদের সাঁড়াশি আক্রমণের মুখে আমরা টিকতে পারিনি। তবু এপ্রিলের মধ্যভাগ পর্যন্ত চলছিল আমাদের প্রতিরোধ।
বাংলাদেশ থেকে ছুটে যাওয়া তরুণ মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রথম অভ্যর্থনা ক্যাম্প ছিল কংগ্রেস ভবন, আগরতলা। এটি পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন আমার বাবা। প্রতিদিন সকালে নবাগত তরুণদের উদ্দেশে তিনি বলতেন, ‘যার বয়স হয়েছে প্রশিক্ষণ নাও, যুদ্ধে যাও। বাংলাকে শক্রমুক্ত কর। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।’
আমি নিজ চোখে দেখেছি কসবা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, আখাউড়া, সিংগারবিল, নরসিংদী ও ভৈরব এলাকা থেকে তরুণদের এক জনস্রোত লেগেছিল কংগ্রেস ভবনে। সেখান থেকে তালিকা করে ওদের প্রেরণ করা হতো বিভিন্ন ক্যাম্পে। মুক্তিযুদ্ধের একপর্যায়ে আমি দুর্গা চৌধুরীপাড়ায় অবস্থিত বিজনা ক্যাম্পের ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত ছিলাম।
ওই ক্যাম্পে আমাদের এলাকার তরুণদেরই পাঠানো হতো বেশি। আমি জানি তাদের কী আগ্রহ ছিল যুদ্ধে যাওয়ার। কী প্রচণ্ড আকাঙ্ক্ষা ছিল স্বাধীনতার জন্য জীবনবলি দেয়ার। তাদের শপথ ছিল, হয় মন্ত্রের সাধন, নয় শরীর পতন। সেই মন্ত্রটি ছিল বাংলার স্বাধীনতা, বাঙালির মুক্তি। এর মন্ত্রণাদাতা ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আমি বিভিন্ন ফ্রন্টে কাজ করেছি।
কখনও সম্মুখ সমরে, আবার কখনও আকাশবাণী ও স্বাধীন বাংলা বেতারের কথিকা রচয়িতা ও পাঠক হিসেবে। এ সময় আমাদের সব কাজের প্রেরণা ছিলেন বঙ্গবন্ধু। এছাড়া অন্য কোনো নামের অনুরণন, অন্য কোনো ব্যক্তির প্রভাব আমাদের অন্তরে ছিটেফোঁটাও ছিল না। আর কেউ আমাদের হৃদয়কে আন্দোলিত করেনি এতটুকু। তিনিই ছিলেন আমাদের হৃদস্পন্দন, ধ্যান ও সাধনা। আমাদের একমাত্র প্রতিজ্ঞা ছিল, বঙ্গবন্ধু তুমি যেখানেই থাক না কেন, আমরা তোমাকে মুক্ত করে আনবোই, দেশকে শক্রমুক্ত করবোই।
মুক্তিযুদ্ধে আমাদের বিজয় অর্জনের পর বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান কারাগার থেকে লন্ডন ও ভারত হয়ে দেশে ফিরে আসেন ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি। তিনি আত্মনিয়োগ করেন দেশ গড়ার কাজে। ওই বছরই ২৬ মার্চ প্রদত্ত বেতার ও টেলিভিশনের ভাষণে তিনি বলেন, ‘শ্মশান বাংলাকে আমরা সোনার বাংলা করে গড়ে তুলতে চাই।’ কিন্তু তার সে স্বপ্ন সফল হওয়ার আগেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোরে ঘাতকদের বুলেটের আঘাতে তিনি চিরদিনের মতো বিদায় নিলেন। বিবেকহীন এক প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের ষড়যন্ত্রে পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে তিনি শহীদ হলেন।
যিনি বাংলাদেশ শব্দটির বাস্তব রূপ দিয়েছিলেন, যার পদভারে বাংলাদেশের মানচিত্রখচিত একটি নতুন পৃথিবীর জন্ম হয়েছিল, ঘাতকরা তাকে বাঁচতে দেয়নি। অতঃপর তাকে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল ইতিহাস থেকে। কালক্রমে তিনি উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হয়েছেন ইতিহাসের পাতায়। ষড়যন্ত্রকারীরাই মুছে গেছে ইতিহাস থেকে। স্বাধীনতার যুদ্ধ চলাকালে মার্কিন চোখ রাঙানি সপ্তম নৌবহরের রূপ ধরে এসে হাজির হয়েছিল ভারত মহাসাগরে। তখন তারা সফল হয়নি। পরে স্বাধীন বাংলাদেশে তারা ব্যবহার করেছিল ভিন্ন অস্ত্র। তার অনিবার্য পরিণতি ছিল খাদ্য সংকট। পটভূমি তৈরি হয়েছিল বঙ্গবন্ধু হত্যা ষড়যন্ত্রের।
বঙ্গবন্ধু তার অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে উল্লেখ করেছেন, ‘আমি কমিউনিস্ট নই। কিন্তু পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে বিশ্বাস করি না। আমি সসিউলিজমে বিশ্বাস করি।’ ১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত আলজিয়ার্সের জোটনিরপেক্ষ সম্মেলনে প্রদত্ত এক ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘বিশ্ব আজ দু’ভাগে বিভক্ত- শোষক ও শোষিত। আমি শোষিতের পক্ষে।’ বঙ্গবন্ধুকে শোষক গোষ্ঠীভুক্ত সমাজতন্ত্রের শত্রুরাই নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছিল। বঙ্গবন্ধু আমাদের জাতীয় কবির মতো হিন্দু-মুসলমানের গালাগালিকে গলাগলিতে পরিণত করতে চেয়েছিলেন।
১৯৪৬ সালের হিন্দু-মুসলমান রায়টের সময় কখনও তিনি রক্ষা করেছেন পীড়িত হিন্দুদের, আবার কখনও আক্রান্ত মুসলমানদের।
দেশবিভাগের পর তিনি হিন্দু-মুসলমান সম্প্রীতির জন্য নিরন্তর কাজ করে গেছেন। তিনি সত্যিকারভাবেই ছিলেন ধর্মবিদ্বেষহীন। ধর্মনিরপেক্ষ। বঙ্গবন্ধু সমাজতন্ত্র আর ধর্মনিরপেক্ষতার শত্রুদের দ্বারাই আক্রান্ত হয়েছিলেন। মানবতার দোসররা তাকে হত্যা করেছিল।
‘কারাগারের রোজনামচা’য় বঙ্গবন্ধু উল্লেখ করেছেন, ‘রাজনীতি করতে হলে নীতি থাকতে হয়। সত্য কথা বলার সাহস থাকতে হয়।’ বঙ্গবন্ধু ছিলেন একজন প্রকৃত বীর। কখনও নীতির সঙ্গে আপস করেননি। বারবার তিনি জেলে গেছেন। আবার বীরের মতো বেরিয়েও এসেছেন জেল থেকে। সবশেষে খুনিদের বুলেটে তিনি মৃত্যুবরণ করেও হয়েছেন মৃত্যুঞ্জয়ী। আমাদের মাঝে তিনি ফিরে আসছেন বারবার আদর্শের প্রতীক হয়ে।
ঘাতকচক্র তাকে হত্যা করলেও তার আদর্শকে হত্যা করতে পারেনি। সেই আদর্শের বলে বলিয়ান হয়েই ছাত্রজীবনে তিনি ছিলেন ছাত্রনেতা। কারাগারে তিনি ছিলেন কয়েদিদের নেতা। যখন বাইরে ছিলেন তখন তিনি ছিলেন সর্বসাধারণের অবিসংবাদিত নেতা। তার নেতৃত্বের মূল প্রতিপাদ্য ছিল সাধারণ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা। একাত্তরের ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই না। আমার দেশের মানুষের অধিকার চাই।’
বিংশ শতাব্দীর আলোড়ন সৃষ্টিকারী তিনজন বাঙালির নাম আমাদের জনমানসে ভাস্বর হয়ে আছে। এদের দুজন হলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম। আরেকজন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
প্রথম দুজন বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করেছেন, বাঙালি জাতিসত্তাকে বিকশিত করেছেন এবং আমাদের বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়েছেন। অপর একজন আমাদের হাজার বছরের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন। বিশ্বের মানচিত্রে এক নতুন রাষ্ট্রের সংযোজন করেছেন।
তিনি অভ্যুদয় ঘটিয়েছেন স্বাধীন-সার্বভৌম এক নতুন দেশের, যার নাম বাংলাদেশ। আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এ দেশটির নাম উচ্চারণ করেছিলেন তার এক কালজয়ী গীতি কবিতায়, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তা উচ্চারণ করে বাস্তবে রূপায়িত করেছেন।
তাই কবির কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে আজ পরম স্বস্তিতে, আদরে ও ভালোবাসায় গর্বভরে আমরা বলতে পারি, ‘নমঃ মমঃ নমো বাংলাদেশ মম/চির মনোরম চির মধুর’। এই বাংলাদেশ, এই বাঙালি সত্তাকে তিনি বিপুলভাবে ভালোবাসতেন। তিনি ছিলেন বাঙালি ঐতিহ্যের ও সংস্কৃতির ধারক। তার জীবনে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পেয়েছে বাঙালি পরিচয়। তাই ১৯৭১ সালে পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে তিনি ঠিক করেছিলেন, ‘ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার সময় আমি বলব, আমি বাঙালি, বাংলা আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা, জয় বাংলা।’
ড. জাহাঙ্গীর আলম : কৃষি অর্থনীতিবিদ ও গবেষক; উপাচার্য, ইউনিভার্সিটি অব গ্লোবাল ভিলেজ; গবেষণা ক্ষেত্রে অবদানের জন্য একুশে পদক ২০২০ প্রাপ্ত
আপনার মতামত লিখুন :