পক্স, যা চিকেনপক্স (Chickenpox) নামেও পরিচিত, একটি ভাইরাসজনিত সংক্রমণ যা ভেরিসেলা-জোস্টার ভাইরাস (Varicella-Zoster Virus বা VZV) দ্বারা ঘটে। পক্সের সংক্রমণ সাধারণত শরীরে ত্বকে ফোসকা বা দানা তৈরি করে, যা ব্যথার কারণ হতে পারে। যদিও অধিকাংশ মানুষ জীবনে একবার পক্সের শিকার হয়, তবে গবেষণা এবং বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ বলছে যে এটি পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায়নি যে, এটি জীবনব্যাপী একবার অবশ্যই হবে অথবা একবারই হবে, পরে আর হবে না। পক্সের ধরন, ব্যক্তির শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং সংক্রমণের প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে পক্সের পুনরাবৃত্তি হতে পারে।
চলুন, বিষয়টি বিশদভাবে আলোচনা করা যাক।
চিকেনপক্স কী এবং এটি কীভাবে ছড়ায়?
চিকেনপক্স একটি অত্যন্ত সংক্রামক ভাইরাসজনিত রোগ, যা সাধারণত শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। তবে এটি যে কোনো বয়সে হতে পারে। এটি মূলত বাতাসের মাধ্যমে, সংক্রমিত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি, স্পর্শ বা ব্যবহৃত বস্তু থেকে ছড়ায়।
লক্ষণসমূহ:
প্রথমে হালকা জ্বর, মাথাব্যথা এবং ক্লান্তিভাব দেখা যায়।
শরীরে ছোট লালচে দাগ দেখা দেয়, যা পরে ফোসকার মতো ফুলে ওঠে এবং চুলকানি সৃষ্টি করে।
৫-৭ দিনের মধ্যে এই ফুসকুড়িগুলো শুকিয়ে গিয়ে খোসা পড়ে যায়।
চিকেনপক্স কি জীবনে একবারই হয়?
সাধারণত, চিকেনপক্স একবার হলে তা পুনরায় হয় না। কারণ, একবার সংক্রমিত হলে শরীরের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা ভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি করে, যা ভবিষ্যতে পুনরায় সংক্রমণ রোধ করতে সাহায্য করে। তবে কিছু ব্যতিক্রমী ক্ষেত্র আছে, যেখানে এটি পুনরায় হতে পারে।
কেন সাধারণত দ্বিতীয়বার হয় না?
আজীবন প্রতিরোধ ক্ষমতা: একবার সংক্রমিত হলে শরীরে ভেরিসেলা-জোস্টার ভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, যা সাধারণত আজীবন কার্যকর থাকে।
মেমোরি সেল (Memory Cell) সক্রিয় থাকে: আমাদের ইমিউন সিস্টেম ভাইরাসের স্মৃতি ধরে রাখে এবং ভবিষ্যতে ভাইরাস আক্রমণ করলে দ্রুত প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
কখন দ্বিতীয়বার চিকেনপক্স হতে পারে?
যদিও এটি বিরল, তবে কিছু নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে কেউ দ্বিতীয়বার চিকেনপক্সে আক্রান্ত হতে পারেন—
যদি রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয় – যারা ক্যান্সার, এইডস বা দীর্ঘদিন স্টেরয়েড ওষুধ গ্রহণ করছেন, তাদের ক্ষেত্রে পুনরায় হতে পারে।
প্রথমবার সংক্রমণ খুব মৃদু হলে – যদি প্রথমবার খুব হালকা আকারে হয় এবং পর্যাপ্ত অ্যান্টিবডি তৈরি না হয়, তবে দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
অ্যান্টিবডি কার্যকর না হলে – কিছু মানুষের শরীর পর্যাপ্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়, ফলে তারা আবার আক্রান্ত হতে পারেন।
চিকেনপক্স থেকে শিংগেলস: অন্য এক সমস্যা
যদিও অধিকাংশ মানুষ দ্বিতীয়বার চিকেনপক্সে আক্রান্ত হন না, তবে ভেরিসেলা-জোস্টার ভাইরাস শরীরে সুপ্ত অবস্থায় থেকে যায় এবং পরবর্তীতে শিংগেলস (Shingles) নামে আরেকটি রোগের সৃষ্টি করতে পারে।
শিংগেলস কী?
এটি সাধারণত বয়স্ক ব্যক্তিদের বেশি হয়।
শিংগেলস হলে ত্বকে ব্যথাযুক্ত ফুসকুড়ি দেখা দেয়, যা চিকেনপক্সের ফুসকুড়ির চেয়ে বেশি বেদনাদায়ক।
ভাইরাসটি স্নায়ুকে আক্রান্ত করে এবং জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করে।
চিকেনপক্স থেকে বাঁচার উপায়
ভ্যাকসিন গ্রহণ করুন: যারা এখনও চিকেনপক্সে আক্রান্ত হননি, তারা ভেরিসেলা-জোস্টার ভ্যাকসিন নিতে পারেন, যা এই রোগ প্রতিরোধে ৯০% কার্যকর।
সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন: যদি কেউ চিকেনপক্সে আক্রান্ত হন, তবে তার কাছাকাছি না আসাই ভালো।
সঠিক পরিচর্যা ও চিকিৎসা গ্রহণ করুন: যদি আক্রান্ত হন, তবে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন, তরল খাবার গ্রহণ করুন এবং চুলকানি কমাতে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ ব্যবহার করুন।
সাধারণত চিকেনপক্স জীবনে একবার হয়ে থাকে, তবে কিছু ব্যতিক্রমী পরিস্থিতিতে কারও না-ও হতে পারে, আবার কারও দ্বিতীয়বার হতে পারে। যারা একবার আক্রান্ত হয়েছেন, তারা সাধারণত সুরক্ষিত থাকেন, তবে শিংগেলস হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং প্রয়োজন হলে ভ্যাকসিন নেওয়া জরুরি।
আপনার মতামত লিখুন :