'গ্রামের বাড়িতে গিয়া কী করবাম? মাইনষে নানা কথা কইবা। এইসব তো আমার ছেড়ি (মেয়ে) সইতা পারতা না। মাইনষের মুখ তো আর বাইন্দা রাখতাম পারতাম না। সবডাই আমারার মতা গরিবের দুর্ভাগ্য।’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে এমনভাবেই নিজের অসহায়ত্বের কথা বলছিলেন এক বাবা। গত মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) ভুলবশত লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেনে উঠে ধর্ষণের শিকার হয় তার কিশোরী (১৪) মেয়ে। গতকাল দুপুরে লালমনিরহাট চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে মেয়েটি। এরপর বিকেলে আদালতের মাধ্যমে পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয় তাকে। কিন্তু মেয়েকে নিয়ে লোকলজ্জার ভয়ে আর গ্রামে ফিরতে চাইছেন না অসহায় বাবা। সমাজের মানুষের কটু কথা থেকে মেয়েকে বাঁচাতে মুখ লুকাতে চান অচেনা মানুষের ভীড়ে।
ভুক্তভোগী ওই কিশোরীর বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার একটি গ্রামে। মা–বাবার সঙ্গে সে গাজীপুরের জয়দেবপুরে থাকে। গত মঙ্গলবার রাতে তার জয়দেবপুর রেলস্টেশন থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভুলবশত ‘লালমনি এক্সপ্রেস’ ট্রেনে উঠে পড়ে মেয়েটা। দিবাগত রাত আনুমানিক আড়াইটার দিকে ট্রেনের অ্যাটেনডেন্ট আক্কাস গাজী তার টিকিট দেখতে আসেন। টিকিট না থাকায় আক্কাস গাজী তাকে একটি আসনে বসিয়ে দেন। এরপর আনুমানিক সকাল সাড়ে আটটার দিকে অ্যাটেনডেন্ট আসন থেকে তাকে কেবিনে এনে দরজা বন্ধ করে ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ। পরে ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করে লালমনিরহাটের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এ ঘটনায় মামলা করার পর আক্কাস গাজীকে (৩২) গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বরিশাল সদর উপজেলার শায়েস্তাবাদ এলাকার বাসিন্দা আক্কাসের বিরুদ্ধে গতকাল বৃহস্পতিবার বিভাগীয় মামলাও করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এর আগে গত বুধবার আক্কাস গাজীকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত কিশোরীর বাড়িতে গিয়ে গতকাল তার এক বাক্প্রতিবন্ধী ভাই ছাড়া অন্য কাউকে পাওয়া যায়নি। যাত্রীবাহী ট্রেনে ধর্ষণের ঘটনাটি জানার পর বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে পড়েন গ্রামের বাসিন্দারা। অপরাধীর দ্রুত ও কঠোর বিচারের দাবি জানানোর পাশপাশি কিশোরীর জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি করেন তারা।
শুক্রবার দুপুরে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে কিশোরীর বাবা জানান, মেয়েকে নিয়ে তিনি আর গ্রামের বাড়িতে যাবেন না। শারীরিক ধকলের পর তার অবুঝ মেয়েটি কারও কটু কথা সহ্য করতে পারবে না। চলে যাবেন কোন অজানা শহরে, যেখানে কেউ চিনবেন না তাদের।
আপনার মতামত লিখুন :