ভারত থেকে নেমে আসা ঢল ও টানা বৃষ্টিতে সিলেট জেলার ৫টি উপজেলায় শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে জেলার ৫ হাজার ৬০১ হেক্টর জমির ফসল। এমন পরিস্থিতিতে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে সিলেটের সব পর্যটন কেন্দ্র। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন ৫ লাখ ৩৩ হাজার মানুষ। চালু করা হয়েছে ৫৪৭টি আশ্রয়কেন্দ্র। প্লাবিত হচ্ছে সিলেট শহরের নতুন নতুন এলাকা।
শুক্রবার (৩১ মে) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জেলার গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট উপজেলার পর নতুন করে জকিগঞ্জ ও গোলাপগঞ্জ উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে সিলেট-তামাবিল সড়ক। জেলা সদরের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ অনেকটা বন্ধ হয়ে পড়েছে গোয়াইনঘাট উপজেলা সদরের সঙ্গে।
এ দিকে সিলেট নগরীর নিচু এলাকাগুলোতে পানি ঢুকতে শুরু করায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। নগরীর তালতলা, কাজিরবাজার, উপশহর, সোবহানীঘাট,মাছিমপুর, মেন্দিবাগ, আলমপুর এলাকায় ঢুকছে বন্যার পানি।
সিলেট আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, চলতি মাসে সিলেটে বৃষ্টিপাত হয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। গত বছরের মে মাসে ৩৩০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল। এবার মে মাসে বৃষ্টি হয়েছে ৭০৫ মিলিমিটার। এর আগে ২০২২ সালের প্রলয়ঙ্করী বন্যার সময়ে মে মাসে সিলেটে ৮৩৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, সিলেট জেলার সাত উপজেলায় পানিবন্দি অবস্থায় আছেন প্রায় ৫ লাখ ৩৩ হাজার ২০২ জন মানুষ। ইতোমধ্যেই ৫৪৭টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। এর মধ্যে সাতটি উপজেলার ৩৪৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে বন্যাকবলিত এলাকার ৪ হাজার ৮০২ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। প্লাবিত উপজেলাগুলোর মধ্যে কানাইঘাট, জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও জকিগঞ্জে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চাল, শুকনো খাবার ও অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সিলেট জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও দুর্গত মানুষের খোঁজ নিতে জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান উপজেলাগুলোতে পরিদর্শন করেছেন। সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সিলেট জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, ‘বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। সুরমা, কুশিয়ারা, সারি ও গোয়াইন নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বাড়ছে অন্যান্য নদ-নদীর পানিও।’
এ বিষয়ে সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান বলেন, ‘অনেক এলাকার পানিবন্দি মানুষকেই আশ্রয়কেন্দ্রে ও নিরাপদে সরিয়ে আনা হয়েছে। জেলার সাতটি উপজেলায় জরুরি ভিত্তিতে প্রায় ৫৪৭টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। প্রয়োজনে তা বাড়ানো হবে।’
তিনি বলেন, ‘বন্যা কবলিত এলাকায় ১ হাজার বস্তা শুকনো খাবার, ৭৫ টন চাল ও আড়াই লাখ টাকার ত্রাণ সামগ্রী প্রদান করা হয়েছে।’
আপনার মতামত লিখুন :