ঢাকা শনিবার, ০৪ জানুয়ারি, ২০২৫, ২০ পৌষ ১৪৩১

বেদে সম্প্রদায় নেই লক্ষ্মীপুরে, বরাদ্দ হারানোর ভয়ে সাবলম্বীদের প্রশিক্ষণ!

ভোরের মালঞ্চ | ফরহাদ হোসেন ডিসেম্বর ২৭, ২০২৪, ০৮:৩২ পিএম বেদে সম্প্রদায় নেই লক্ষ্মীপুরে, বরাদ্দ হারানোর ভয়ে সাবলম্বীদের প্রশিক্ষণ!

বেদে জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার ‘হাউজ ওয়্যারিং, মটর ও ফ্যান মেরামত’ প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। প্রশিক্ষিতরা নিজেদের সাবলম্বী করার পাশাপাশি অবদান রাখবেন সমাজ উন্নয়নে। কিন্তু লক্ষ্মীপুরে ঘটছে তাঁর উল্টো। সরকারের চমকপ্রদ এই প্রকল্পটি ভেস্তে যাচ্ছে সমাজসেবা কার্যালয়ের নীতিবহির্ভূত কর্মকাণ্ডে। 


অভিযোগ রয়েছে, দক্ষতা উন্নয়নের লক্ষ্যে জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের অধীন পরিচালিত প্রশিক্ষণে ২০ জন অংশ নিয়েছেন। এরমধ্যে একজনও নেই বেদে সম্প্রদায়ের। প্রশিক্ষণার্থীর তালিকায় সদর ও রায়পুর ব্যতিত জেলার অন্য উপজেলার যুবকদের নাম নেই। অথচ রামগতি ও কমলনগরে সবচেয়ে বেশি বেদে সম্প্রদায়ের বসবাস। অনগ্রসর নয় প্রশিক্ষনার্থী সকলেই সাবলম্বী। যার মধ্যে ৭ জন জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের এক কর্মকর্তার নিজ ইউনিয়ন কুশাখালীর বাসিন্দা। এছাড়া এখনো প্রশিক্ষনার্থীদেরকে দৈনিক ভাতা প্রদান করা হয়নি। 


জানা গেছে, বেদে সম্প্রদায়ের যুবকদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে সরকার ‘হাউজ ওয়্যারিং, মটর ও ফ্যান মেরামত’ প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। প্রশিক্ষণে অংশ নিতে ৪৩ জন যুবক আবেদন করেন। সমাজসেবা কার্যালয় যাচাই-বাছাই করে লক্ষ্মীপুর সদরের ১৫ জন ও রায়পুর উপজেলার ৫ জনকে প্রশিক্ষনার্থী হিসাবে নির্বাচিত করেন। দক্ষ প্রশিক্ষকের মাধ্যমে তাদের ৩৮ দিনব্যাপী প্রশিক্ষণটি দেওয়া হচ্ছে। 


আরও জানা গেছে, প্রচারণা ছাড়া পছন্দের লোকদের দিয়ে আবেদন সংগ্রহ করেন সংশ্লিষ্টরা। নিয়ম থাকলেও বেদে পল্লীগুলোতে কোন ধরণের প্রচারণা করা হয়নি। এজন্য বেদে যুবকরা প্রশিক্ষণ গ্রহনে আবেদন করতে পারেনি। 


নাম প্রকাশ না করা শর্তে সমাজসেবা কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, এ জেলায় বেদে সম্প্রদায়ের লোক নেই। তাই অন্য অনগ্রসর যুবকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। প্রশিক্ষনার্থীরা টাকা খরচ করে ফেলবে, এই ভয়ে তাদের দৈনিক ভাতা প্রদান করা হয় না। তবে ওই টাকা দিয়ে তাদেরকে প্রশিক্ষণ শেষে যন্ত্রপাতি ক্রয় করে দেওয়া হবে।


বেদে যুবক নুর হোসেন বলেন, সাপের খেলা মানুষ তেমন দেখে না। তাই আয় কমে গেছে। আর হারিয়ে যাওয়া স্বর্ণ খোঁজা, তাবিজ-কবজ বিক্রিও অনেক কম। নারীদের পেশায়ও একই চিত্র। এখন সংসার চালাতে খুবই কষ্ট হয়। সরকার বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিলে, ডাল-ভাত খেয়ে জীবনযাপন করতে পারতাম। তবে সমাজসেবা কার্যালয়ের অধীন বেদে সম্প্রদায়ের লোকদের প্রশিক্ষণের বিষয়ে কিছুই জানেন না তিনি। 


অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক মাহবুবুর রহমান বলেন, প্রকল্পের নিয়ম অনুযায়ী বেদে সম্প্রদায়ের লোকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। প্রশিক্ষনার্থী যাচাইয়ে কোন অনিয়ম হয়নি। অফিসিয়ালি জটিলতা থাকায় প্রশিক্ষনার্থীদের দৈনিক ভাতা প্রদানে বিলম্ব হয়েছে।

 
সংবাদ প্রকাশ না করার অনুরোধ করে এই কর্মকর্তা বলেন, প্রশিক্ষনের মাধ্যমে দক্ষ হয়ে উঠবে লক্ষ্মীপুরের যুবকরা। এতে লাভবান হবে এখানকার মানুষজন। যদি কোন কারনে, প্রশিক্ষণ কর্মসূচীটি বাস্তবায়ন না হয়। তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে জেলাবাসী। তবে, নিয়ম বহির্ভূতভাবে প্রশিক্ষণ পরিচালনার বিষয়ে কোন সদুত্তর দেননি তিনি। 


সুশাসনের জন্য নাগরিক’র (সুজন) জেলা সভাপতি কামাল হোসেন বলেন, সমাজসেবা কার্যালয়ে এধরণের অনিয়ম বিগত দিনেও হয়েছিলো। বর্তমানেও হচ্ছে। এখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারিরা অনৈতিক সুবিধা ছাড়া ভিক্ষুককেও সহযোগিতা (সরকারি) দেয়না। বর্তমান প্রশাসন যদি এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে সরকারের উদ্দেশ্য যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হবে না। 


জেলা প্রশাসক রাজিব কুমার সরকার বলেন, বেদে সম্প্রদায়ের অনগ্রসর লোকদের প্রশিক্ষিত করতে সরকার প্রকল্পটি গ্রহণ করেছে। যেখানে বেদে ছাড়া অন্য জনগোষ্ঠীর মানুষ প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ নেই। যদি এর ব্যর্তয় ঘটে থাকে, তাহলে সরকারের উদ্দেশ্য ভেস্তে যাবে। 
 

Side banner